নওগাঁয় প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়টি জেলার বদলগাছী উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহাসিক পাহাড়পুরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের যৌক্তিক জোর দাবী করেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানায়, নওগাঁর বদলগাছী উপজেলাটি প্রাচীন নিদর্শন ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার যেমন বিশ্বের দরবারে পর্যটকদের মুগ্ধ করে, তেমনি কৃষি চাষাবাদে সারা বছর সব ধরণের ফসলসহ সবজি চাষে বিখ্যাত এলাকা হিসেবে পরিচিত এই উপজেলা। এই উপজেলার সমতল ভূমির গভীর গর্ভে রয়েছে খনিজ সম্পদে ভারা যা শুধু এলাকাবাসীকে নয় গোটা দেশবাসীকে মুগ্ধ করেছে। ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার পাল রাজবংশের শাসন আমলে সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীতে এই বিহারটি নির্মাণ করা হয়েছিল সোমপুর বিহার নামকরণে।
এখনও বিহারটি মাথা ঊঁচু করে সে প্রজন্মের হাতছানির জানান দিচ্ছে বিশ্বের পর্যটকদের। পাহাড়পুর ঘুরে আসলে সাধারণ মানুষের মাঝে এখনো প্রেরণার সুর বাজে। আর এই প্রেরণা উৎসাহ উদ্দীপনা থেকেই পাহাড়পুরের এই ইতিহাস ঐতিহ্যকে জাগ্রত রাখতেই নওগাঁ জেলার সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমানন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট ঐতিহাসিক পাহাড়পুওে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য প্রস্তাব করেন। বর্তমানে এই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে নওগাঁ জেলায় শুরু হয়েছে নানা রকম টানাপোড়ন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় খাদ্যমন্ত্রী নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতরা বিলে বিশ্ববিদ্যালয়টি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া নওগাঁ সদর উপজেলার নেতৃবৃন্দ দাবি করছে নওগাঁ জেলার সদরের আশেপাশে অথবা নওহাটা মোড়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের জন্য ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে রশি টানাটানি চলছে।
নিয়ামতপুর উপজেলার কিছু সচেতন নাগরিকের সাথে কথা বললে তারা জানায়, ছাতরা বিল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উপযুক্ত জায়গা নয়। তারা আরো জানায়, বিল ভরাট করতে যে খরচ হবে সে টাকা ব্যয় করে ঐতিহাসিক পাহাড়পুরে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করা হবে। বিষয়টি নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন বদলগাছী উপজেলাবাসী তথা পাহাড়পুর এলাকার অধিবাসীরা। এলাকার সচেতন মহল মনে করেন একসময় পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বৃহৎ একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। যার প্রাচীন নিদর্শন এখনও উপমহাদেশের মধ্যে সেরা।
আর এ জন্যই পাহাড়পুরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জোর দাবি রাখে এলাকাবাসী। তাই এই বিষয়টি বর্তমান সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত বলে মনে করেন তারা। কারণ হিসেবে বলা হয় বাংলা ভাষার যে চর্যাপদ সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীতে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে সৃষ্টি হয়। এই চর্যাপদই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের আদি পর্বের প্রথম মৌলিক গ্রন্থ।
সূত্র মতে জানা যায়, এগার শতাব্দীতে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে শত্রুপক্ষের আঘাত আসে। এসময় বৌদ্ধ ভিক্ষুকরা সেখান থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেয় নেপালে।
বিশ শতকের গোড়ার দিকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে। সেটি সংঘটিত হয়েছিল ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে। ঐসময় মহামোহপাধ্যায় হরপ্রসাদশাস্ত্রী নেপালের রাজ দরবার গ্রন্থশালা থেকে চর্যাচর্যবিনিশ্চয় নামে একটি পুঁথি আবিষ্কার করেন। এঘটনার দশ বছর পর ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে হরপ্রসাদশাস্ত্রী মহাশয়ের সম্পাদনায় হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গলা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা নামে পুঁথিটি প্রকাশ করেন তিনি। প্রকাশিত এই পুঁথিটির পরিশীলিত নাম চর্যাগীতি বা চর্যাপদ।
পৃথিবীর এমন অনেক সমৃদ্ধ ভাষা রয়েছে যার প্রাচীন সাহিত্যের কোন নমুনা নেই। অথচ বাংলা ভাষার প্রাচীন পর্বে রচিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যের দৃষ্টান্ত রয়েছে চর্যাপদ। যা পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে সৃষ্টি।
আর এজন্যই নওগাঁ জেলায় প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় বদলগাছীর পাহাড়পুর নির্মাণের জোর দাবি করেন এলাকাবাসী। ইতিমধ্যে পাহাড়পুর এলাকাবাসী প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়টি পাহাড়পুর স্থাপনের দাবিতে সরকারের নিকট দাবি দাওয়া তুলে ধরতে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন।
আর ঐ কমিটির আহ্বায়ক মথুরাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান এবং সদস্য সচিব বৈদ্যনাথ টপ্প বলেন, পাহাড়পুর একসময় বিশ^বিদ্যালয় ছিল। এখানকার আচার্য ছিলেন বিখ্যাত পতি শীলভদ্র ও অতীশ দীপঙ্কর। এখনও পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার সারা বিশ্বের কাছে একটি ঐতিহাসিক বৃহত্তম প্রতœনিদর্শন। প্রতিদিন এখানে দেশি বিদেশী পর্যটকসহ হাজার হাজার শিক্ষার্থী শিক্ষা সফরে আসে। এই স্মৃতি বিশে^র দরবারে পুনরুজ্জীবিত রাখতেই সাবেক নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমান পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব করেন। তার এই প্রস্তাব আমরা এলাকাবাসী সাদরে গ্রহন করেছি।
আমরা বঙ্গবন্ধর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি যাতে পাহাড়পুরের সুনাম ও ঐতিহ্য ধারণে জন্য প্রস্তাবিত বিশ^বিদ্যালয়টি যেন পাহাড়পুরে নির্মাণ করা হয়।
তারা আরো বলেন, পাহাড়পুর আসা যাওয়ার জন্যে অন্যতম যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া নওগাঁ সদরসহ পাশর্^বর্তী জয়পুরহাট জেলা এবং বগুড়াসহ সারা দেশের সঙ্গে বদলগাছী তথা পাহাড়পুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই উন্নত।
এছাড়া নিয়ামতপুর উপজেলার সঙ্গে রাজশাহী বিভাগের দূরত্বের ব্যবধান খুব বেশি নয়। সেক্ষেত্রে পাহাড়পুর বিশ^বিদ্যালয় নির্মাণের উপযুক্ত জায়গা।