কায়সার হামিদ মানিক,কক্সবাজার)প্রতিনিধি, | শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০১৯
কক্সবাজারের
উখিয়ায় পরিচয় গোপন করে চলতি প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষায় অংশ
নিচ্ছে অসংখ্য রোহিঙ্গা শিশু। এতে এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
ইতিমধ্যে ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষায় নকল করার দায়ে এক রোহিঙ্গা
পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সহায়তায় রোহিঙ্গা ছেলেমেয়েরা
প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কক্সবাজারের
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরীক্ষা
কেন্দ্রে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষায় বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা শিশু
পরীক্ষা দিচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের।
বৃহস্পতিবার
(২১ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের হল সুপার সাহাব
উদ্দিন ও কেন্দ্র সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, অনেক রোহিঙ্গা ছেলেমেয়ে এ
কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে বলে জানা গেছে। কিন্তু আমরা অন্য ইউনিয়ন ও
স্কুল থেকে পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করতে এসেছি।
তারাসহ
দায়িত্ব পালনরত অন্য শিক্ষকরাও বলেন, ছোট ছোট শিশুরা পরীক্ষায় নকল করবে তা
আমাদের ধারণার বাইরে ছিল। বুধবার (২০ নভেম্বর) ইবতেদায়ি আরবি পরীক্ষা
চলাকালে হল পরিদর্শকরা মো. জুবাইর নামের এক পরীক্ষার্থীকে নকল করার সময়
হাতেনাতে ধরেন। পরে তার শরীর তল্লাশিকালে আরো নকল উদ্ধার করা হয়। যাচাইকালে
ওই পরীক্ষার্থী স্বীকার করে সে রোহিঙ্গা।
ওই
পরীক্ষার্থী উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী ইবতেদায়ি মাদরাসা থেকে
সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তার রোল নং ৯২৮। ওই পরীক্ষার্থী তার সাথে আরও
বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা শিশু একই কেন্দ্রে ইবতেদায়ি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে বলেও
তথ্য দিয়েছে। প্রাথমিকের চেয়ে ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোতে রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী
বেশি বলে দায়িত্বশীল শিক্ষকরা জানান।
থাইংখালী সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব ও রাজাপালং ইউনিয়নের কুতুপালং সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, কতিপয় শিক্ষক
নীতি-নৈতিকতা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। ২০১৭ সালে কুতুপালং প্রাইমারি
স্কুলে যোগদান করার পর খবর পেলাম এ স্কুলে অনেক রোহিঙ্গা শিশু বিভিন্ন
ক্লাসে পড়ছে। তখন বিশেষ উদ্যেগ নেয়ায় ওই বছর বিভিন্ন ক্লাসের ৯৬ জন
শিক্ষার্থী স্কুলে আসা বন্ধ করে দেয়। খবর নিয়ে জানতে পারি এরা সবাই
রোহিঙ্গা।
প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান আরো বলেন,
মজার বিষয় হচ্ছে, ২০১৮ সালে রোহিঙ্গা চিহ্নিত হওয়ায় জাহাঙ্গীর আলম নামের এক
শিক্ষার্থীকে চতুর্থ শ্রেণিতে ছাড়পত্র দিয়ে দিই। কিন্তু ওই ছেলেকে
বালুখালী আইডিয়াল কেজি স্কুল থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিতে দেখে হতবাক
হই।
ওই কেজি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রত্না রানী সেন
বলেন, কাগজপত্র ঠিক পাওয়ায় ওই ছাত্রকে চলতি বছরের ১১ মার্চ ৫ম শ্রেণিতে
ভর্তি করে সমাপনী পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
পালংখালী
ইউপির চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শুনেছি মাদরাসা ও কেজি
স্কুলগুলো থেকে বেশ কিছু রোহিঙ্গা ছেলেমেয়ে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী
পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এটা গর্হিত অন্যায়। যারা রোহিঙ্গাদের পাবলিক পরীক্ষায়
অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা
নেয়া জরুরি।
উখিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত
কুমার ধর বলেন, এ ধরনের বেশ কিছু অভিযোগ ও তথ্য পাওয়া গেছে। উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। উপযুক্ত প্রমাণ
ছাড়া কাউকে পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত করা ঠিক হবে না। তদন্ত চলছে, তদন্তে
প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত রাখা
হতে পারে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন